1. admin@mannanpresstv.com : admin :
লেখক : পলি_আনান এর গল্প // অবাধ্য_বাঁধনে - মান্নান প্রেস টিভি
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

লেখক : পলি_আনান এর গল্প // অবাধ্য_বাঁধনে

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩
  • ১১৫ Time View
ধারের টাকা দিতে না পারলে মেয়ে বউকে বিক্রি করে দে।আমরাই কিনে নিব।”
একজীবনে এতটা অপমান কখনোই হননি মুজাহিদ হাসান।এই মুহুর্তে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইছে তার।নত মস্তকে ঢোক গিলে দ্রুত চোখ বুঝলেন।চোখটা কেমন জ্বালা করছে বাচ্চাদের মতো হামাগুড়ি দিয়ে কাঁদতে পারলে বোধহয় একটু শান্তি পাওয়া যেত।
” কিরে টাকা দিবি?নাকি তোর মেয়ে বউকে নিয়ে যাব?”
চোখ তুলে তাকালেন মুজাহিদ হাসান।মাথা ঘুরাতে ভেতরের কক্ষের পর্দার আড়ালে উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রীর চোখে চোখ রাখতে লজ্জায় চোখ ঘুরিয়ে নিলেন তিনি।
” আমাকে আর কয়েকটা মাস সময় দিন।স্যারের সাথে আমি যোগাযোগ করবো।”
“টাকা দিবি বলে দেড় বছর সময় পার করলি আমাদের টাকা চাই মানে এই সাপ্তাহেই চাই।”
” কিন্তু…”
” কোন কিন্তু না।তুই টাকা দিবি।না হলে তোর মেয়ে বউকে দে তাদের আমরাই বেঁচে টাকা নিয়ে…”
এতক্ষণ যাবৎ নোংরা কথায় লিপ্ত থাকা লোকটি সহসা চুপসে যায়।গালের তীব্র জ্বালায় পাশ ফিরে তাকাতে রোষানলে চেয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
” তোর সাহস কতখানি তুই আমার গালে চড় দিস।”
” এখান থেকে না গেলে হাত পা ভেঙ্গে ফেলবো।”
” কু**বাচ্চা তোর এত দেমাক।তোরে বেচার ব্যবস্থা আমি করবো।”
মুজাহিদ হাসান মেয়ের এমন দুঃসাহস দেখে অবাক হলেন।আসন্ন বিপদের কথা মাথায় আসতে দ্রুত হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসেন মেয়েকে।
” ঈশু মা তুই ভেতরে যা।”
” এরা কারা বাবা?এত খারাপ খারাপ কথা বলছে আর তুমি সহ্য করে নিচ্ছো?”
” আমার ব্যপার আমি বুঝবো তুই যা।”
” আমি যাব না।”
ঈশার দৃঢ় কথায় তেঁতে উঠলেন মুজাহিদ হাসান।কিন্তু তার আগেই ঈশার হাত ধরে নেয় রাগান্বিত লোকটি।
” কই যাস তুই?তোরে আমি দেখতাছি।”
এমন বিদঘুটে পরিস্থিতিতে একটুও ঘাবড়ালো না ঈশা।বরং মেয়েটার মাঝে জেদ যেন উপড়ে পড়ছে।পায়ে থাকা জুতা দ্রুত হাতে তুলে লোকটির গালে তৎক্ষণাৎ বেশ কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়।আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেদের দল দ্রুত ধরে নেয় ঈশার হাত।
” এখান থেকে চলে যান।”
” কু*বাচ্চা, পাওনা আশি লক্ষ টাকা আর তোরে দুইটাইরেই নিয়া যামু।বেশি সাহস দেখাইসত এই সাহসের দাম দিবি তুই।”
অতিদ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় লোকগুলো।ঈশা ততক্ষণে সোফায় বসে যায়।প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে মুজাহিদ হাসানকে বলে,
” আশি লক্ষ টাকা!এসবের মানে কি বাবা?”
পর্দার আড়াল ছেড়ে ততক্ষণে বেরিয়ে আসেন ঈশার মা সুলতানা।মেয়ের এমন অসংগত সাহসে তিনি বড্ড ঘাবড়ে গেছেন।
” এসব তোর জানতে হবে না।তুই এমনটা কেন করেছিস ঈশু?এবার তোর নিরাপত্তা কে দিবে ?তোর কিছু হয়ে গেলে…”
” আমি যা জানতে চাই তা বলো।বাবা আশি লক্ষ টাকা কেন নিয়েছেন?”
” তোর বাবা এই টাকা নেয়নিরে মা।”
” তাহলে?”
” তোর চাচা ধার করেছে।সাক্ষি হিসেবে তোর বাবা উপস্থিত ছিল।তোর চাচা পাওনা টাকা শোধ করতে না পেরে পালিয়ে যান।”
ঈশা অবাক চোখে তাকায় তার বাবার দিকে।মুজাহিদ হাসান কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছেন।
” বাবা, এসব কি বলছে মা?
” আমি জানতাম না তোর চাচা এত টাকা ধার করেছে।আমি জানতাম ব্যবসার কাজে সে পঁচিশ লক্ষ টাকা নেবে কিন্তু আমাকে বোকা বানিয়ে এভাবে ফাঁসিয়ে দিল।সে তো পালিয়েছে এবার সব দায় আমার ঘাড়ে।”
২.
হাতে থাকা পাজেলটা বেশ কায়দা করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক করতে ব্যস্ত ঈশান।তার সামনে একের পর এক অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছে ইসমাইল নামক ব্যক্তিটি।তার অভিযোগ পাওনা টাকা চাওয়ায় মুজাহিদ হাসানের মেয়ে তাকে জুতা মে/রেছে, গালে চড় মে/রেছে।কতটা সাহস এই মেয়ের ভাবা যায়!ঈশানের হাভ ভাবে মনে হচ্ছে এসব কথা সে কিছুই কানে তুলছে না অথচ ভেতর থেকে সে ক্রোধটাকে দমন করার চেষ্টায় আছে।
” মিস্টার ইসমাইল আপনার উচিত ছিল মুজাহিদ সাহেবকে তুলে আনা।আমি শেষ সময় তাকে আজকেই দিয়েছিলাম অথচ তিনি আজকেও আমার টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ।”
” মাত্র ছয় লক্ষ টাকা আমার হাতে দিয়ে বলেন বাকিটা পরে দেবেন।এবার আপনি বলুন স্যার আমি কি করতে পারি?এরপর যখন গরম হয়ে গেলাম তখন ওঁনার মেয়ে এসে তামাশা করে গেল।স্যার আপনি কি করবেন জানি না তবে এই মেয়ের জীবন আমি শেষ করেই ছাড়বো।”
” আপনার বর্ননা শুনে মনে হচ্ছে মেয়েটা ডেঞ্জারাস তবে এই ঈশান শাহরিয়ারের থেকে বেশি ডেঞ্জারাস নয়।রাসেল গাড়ি বের কর।”
ঈশান শাহরিয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধু রাসেল আদেশ পেয়ে ছুটে যায়।
ঈশাদের ফ্লাটের বাইরে বাদ বাকি ফ্লাটের সদস্যদের কানাঘুষা চলছে।গুন্ডাদের হুমকি দামকি সকলেই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পরখ করেছে।এখন প্রতিবেশিদের একটাই কাজ আলোচনা সমালোচনা করা।ঈশার মা সুলতানা দরজা খুলতেও দ্বিধায় আছেন পাশের ফ্লাটের ভাবীদের নানান কথার সম্মুখে পড়লে তিনি কি জবাব দেবেন ভেবে পাননা।
ঘরের ভেতরে বসে সবাই যখন চিন্তায় মগ্ন ঠিক সেই সময় পরপর বেশ কয়েকবার বেজে উঠে ডোর বেল।মুজাহিদ হাসান ভয়ার্ত চোখে তাকালেন সুলতানার দিকে।মেয়ের ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তিনি যেন দিশাহীন হয়ে পড়েছেন।
” ঈশা মা তুই এখান থেকে যা।তোর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে রাখ।প্রয়োজনে আলমারির পেছনে লুকিয়ে পড়।এরা গুন্ডা,সন্ত্রাস তোর ক্ষতি করতে ছাড়বে না।”
” বাবার ক্ষতি করবেনা?আমি কোথাও যাব না মা।”
” তোমার মা যা বলছে তা শুনো ঈশা।”
” বাবা তোমরা যখন মাসের পর মাস এই সত্যিটা আমার কাছে আড়াল করেছো তখন তোমাদের কোন কথা শোনার ইচ্ছে আমার নেই।”
” তোর এত কথা শোনার সময় এখন নয়।”
সুলতানা হাত টেনে ভেতরের কক্ষে নিয়ে যান ঈশাকে।এতক্ষণ আলোচনার মাঝে বিরতিহীন বেল ডোর বেজেই চলেছে।ঈশার ত্যাড় কথা হেরে গিয়ে ভয়ে ভয়ে দরজা খুলতে এগিয়ে যান মুজাহিদ।।দরজা খুলতে মুখোমুখি হয়ে পড়েন ঈশান শাহরিয়ারের।ছেলেটা ফিচেল হেসে হাতে থাকা পিস্তল ঠেকে ধরেন মুজাহিদ হাসানের কপালে।ঈশান ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যায় মুজাহিদ হাসান তত পিছিয়ে যায়।ঈশানের পেছন পেছন হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করে একদল গার্ড।
” চোরের মায়ের বড় গলা কথাটা শুনেছেন মুজাহিদ সাহেব?”
” জ..জি স্যার।”
” আপনার কাহিনী ঠিক সেটাই হয়েছে।আমার টাকা না দিয়ে আমার লোকের গায়ে হাত।”
” ভু..ভুল হয়ে গেছে স্যার মাফ করে দিন।”
” কাজটা করার আগে মাথায় ছিল না ঈশান শাহরিয়ারের কথা?”
মুজাহিদ হাসান নড়তে পারলেন না।কেননা তার মাথায় ঈশানের পিস্তল ঠেকে আছে।
” আপনার ভাই বেঈমানি করেছে আমার টাকা পরিশোধ না করে পালিয়েছে আপনিও কী পালাতে চান?”
” ন..না স্যার।”
” আপনি পালাতেও পারবেন না মুজাহিদ সাহেব।পালানোর রাস্তা যে বন্ধ করে দিয়েছি।আপনার মেয়ে কই?”
বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো মুজাহিদের।ঈশার ক্ষতির কথা ভেবে দ্রুত বলেন,
” আমার মেয়ে এখানে নেই স্যার সে চলে গেছে।”
” চলে গেছে মানে?কোথায় গেছে?”
মুজাহিদ হাসান মুখ খুললেন না।ভয়ার্ত চোখে চেয়ে রইলেন ঈশানের দিকে।
” কথা বলছেন না কেন?মেয়েকে কোথায় পাঠিয়েছেন?”
” জানি না।”
” জানি না মানে?”
ঈশানের ধমকে কেঁপে উঠলেন মুজাহিদ।ঈশান ততক্ষণে দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত।
” আমার মেয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি স্যার।সে ছোট মানুষ একটা ভুল করে ফেলেছে।”
” কতটা ছোট সে আমি দেখতে চাই।কতটা ছোট হলে সে ঈশান শাহরিয়ারের লোকের গায়ে হাত তুলে আমি দেখতে চাই।”
ঈশানের গর্জনে ঘাবড়ে গেলেন মুজাহিদ।মেয়ের বিপদের কথা ভেবে প্রচন্ড দূর্বল হয়ে পড়ছেন তিনি।ঈশানের হাতে থাকা পিস্তল সরিয়ে দেয়ালে থাকা টিভিতে শ্যুট করতে বিকট শব্দে ভেঙ্গে চুরে কাঁচ ছড়িয়ে যায়।ভেতরের কক্ষ থেকে গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠে ঈশা।বাবার ভয়ে সুলতানার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে চলে যায় সামনের কক্ষে।ততক্ষণে ঈশান মুজাহিদ হাসানের শার্টের কলার চেপে ধরেছে।
এমন পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখে বাবার অপমান মোটেও সইতে পারলো না ঈশা।তৎক্ষণাৎ সে নিজের সবটা শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল ঈশানকে।
আকস্মিক ধাক্কা গার্ডদের গায়ে ছিটকে পড়লো ঈশান।ততক্ষণে তার চোখে সামনে ভেসে উঠেছে রণমত্ত ন্যায় রোষানলে জ্বলতে থাকা এক রমণীর প্রতিচ্ছবি।যার রক্তিম চোখের কোণে ঝলকে পড়ছে নোনা জল।
” আপনার টাকা আমার বাবা ধার নেয়নি যে তাকে এত হয়রানি করবেন।যে টাকা নিয়েছে তাকে খুঁজে বের করুন।মানলাম আমার বাবা সাক্ষী ছিলেন কিন্তু তাই বলে এতগুলো টাকা এত অল্প সময়ে শোধ করতে পারবে এটা কেমন ধারণা আপনাদের?বাড়িতে গুন্ডা পাঠিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছেন টাকা আমরা লুকিয়ে রেখেছি?গুন্ডা পাঠালে ভয়ে টাকা বের করে দিব?”
“মেয়ে তুমি কার গায়ে হাত দিয়েছো চেনো না তুমি আমায়।”
ঈশানের রাগি কথার সুরে তাচ্ছিল্য হাসলো ঈশা।
” চিনি না আপনাকে।আর চিনতেও চাই না।কে আপনি?”
” আমি ঈশান শাহরিয়ার অক্ষরে অক্ষরে চিনিয়ে ছাড়বো আমি কে।”
” এতটা সময় আমার কাছে নেই।শুনে রাখুন এক বছর সময় নিলাম, এই এক বছরে আপনার সম্পূর্ণ পাওনা টাকা শোধ করে দিব।এখন আসতে পারুন।”
ঈশার কথায় রীতিমতো অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশান।সেই অবাকের সাথে মিশে আছে রাগ জেদ তীব্র অপমানের আভাস।রাসেল পাশ থেকে দাঁড়িয়ে চুপচাপ পরখ করছিলো ঈশানকে।ঈশান শাহরিয়ার নামক আপদ্’টাকে হয়তো মেয়েটা চিনে না জানে না।
ঈশান কপট হেঁসে নড়ে চড়ে মুখোমুখি দাঁড়ালো ঈশার।তাদের মাঝে কিঞ্চিৎ দূরত্ব সাদৃশ্যমান।মুজাহিদ হাসান মেয়ের হাত টেনে দ্রুত সরিয়ে হাত জোর করে ক্ষমা সুরে ঈশানকে বলেন
” আমার মেয়েটাকে ক্ষমা করুন স্যার।মেয়েটা না বুঝে আপনার সাথে বেয়াদবি করেছে।”
” ক্ষমা?আপনার মেয়ে যখন সময় নিয়েছে তখন আমিও দেখতে চাই এক বছরে সে কি কি করে।অল দা বেস্ট আশা করি আপনার আগামীর দিন শুভ হবে।”
চলবে___

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD