লটারির নেশায় সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। ঘর-বাড়ি হারিয়ে পথে বসেছিলেন। আবার সেই লটারিই সব ফিরিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গের চাপড়া থানার বড় আন্দুলিয়া মণ্ডলপাড়ার যুবককে। লটারির হাত ধরেই রাতারাতি কোটিপতি হলেন তিনি। নবমীর দুপুরে দেড় হাজার টাকার লটারির টিকিট কিনে মালিক হলেন কোটি রুপির।
এই যুবকের নাম আনারুল শেখ। কোটি রুপির লটারি জেতার খবর প্রকাশ্যে আসতেই তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। পূজা উপলক্ষে সব সরকারি দফতর ছুটি থাকায় টিকিটটা আপাতত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অফিস আদালত ছুটি থাকায় আনারুলের নিরাপত্তার কারণে টিকিটটি থানার হেফাজতে রয়েছে। অফিস আদালত খুললে তাকে ডেকে নিয়ে তার অর্থ পাওয়ার বিষয়ে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই দশমীর সকালে আনারুলের বাড়িতে ভিড় জমান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আনারুল কর্মঠ। কিন্তু রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিলেন তিনি। ভাগ্য ফেরাতে লটারির টিকিট কাটা ছিল তার নেশা। সেই টিকিট কাটতে তার জমানো লাখ-লাখ টাকা, দুটো অটো, একটা বাইক বিক্রি করে দেন। এমনকি, বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটা অংকের অর্থ ধারও করেছিলেন আনারুল। সেই ধার শোধ করতে নিজের বসতবাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। পরিবার নিয়ে আনারুলকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল কখনো মামার বাড়ি তো কখনো শ্বশুরবাড়িতে। অবশেষ ফিরল তার ভাগ্য।
আনারুল বলেছেন, “কিছু দুষ্টু লোকের পাল্লায় পড়ে লটারি টিকিট কেটে জীবনের সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলাম। বিদেশে কয়েক বছর কাজ করে ২৭ লাখ রুপি সঞ্চয় করেছিলাম, রাতারাতি বড়লোক হবার নেশায় লটারি টিকিট কাটতে কাটতে সব অর্থ শেষ হয়ে যায়। হাজার-হাজার রুপির টিকিট কেটেও কোনোদিন পুরস্কার পাইনি। টিকিট কাটার নেশায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে টিকিট কেটেছি। সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে গাড়ি-বাড়ি সব কিছু বিক্রি করতে হয়েছে। সবকিছু হারিয়ে তখন আমি পথের ভিখারি।
তিনি জানান, অবশেষে পরিবার ছেড়ে অন্য রাজ্যে শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। কয়েকদিন আগে সেই রাজ্যে থেকে বাড়িতে আসেন তিনি। নবমীর দুপুরে কাজে যাওয়ার জন্য কৃষ্ণনগর স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি ফেরার পথে বড় আন্দুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নেমে একটি লটারির টিকিট কাউন্টার থেকে ১৫০০ রুপির টিকিট কাটেন তিনি। রাতে মোবাইলে দেখেন, ১ কোটি রুপির প্রথম পুরস্কার জিতছেন।
আনারুল বলছেন, “যা গেছে তা ফিরে পাব না, কিন্তু যা হারিয়েছি তা পুনরায় ফিরিয়ে আনব। আর জীবনে কোনোদিন লটারির টিকিট কাটব না।”
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন