1. admin@mannanpresstv.com : admin :
লেখক : রিয়াদ আহম্মদ ভূঁঞা এর গল্প // একজন_মোটা_মেয়ে_এবং_আমি - মান্নান প্রেস টিভি
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন

লেখক : রিয়াদ আহম্মদ ভূঁঞা এর গল্প // একজন_মোটা_মেয়ে_এবং_আমি

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩
  • ৫৭ Time View
তানহার ডায়েরীতে থাকা লিখাটি পড়তে লাগলাম আমি।
‘আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে যে কার মুখ দেখেছিলাম কে জানে। দেখি তো মনে করে! নাহ মনে করতে পারছিনা। কলেজে আজ ফাংশন ছিল। বিরাট করে ফাংশনের আয়োজন করা হয়েছিল। যার প্রধান অতিথি ছিলেন আমাদের স্থানীয় এমপি মহোদয়। ফাংশনে সবমিলিয়ে প্রায় পনেরো থেকে সতেরশো লোক তো ছিলই। আমি বসেছিলাম সবার সামনের সারিতে। সেদিন ক্লাসে শুনেছিলাম আজ নাকি গত বছরের আমাদের কলেজের ‘স্টুডেন্ট অব দ্যা ইয়ার’ ঘোষণা করা হবে। আমার বিশ্বাস ছিল রিয়াদই এই পুরষ্কারটা পাবে এবং সেটাই হলো। ইয়াহু হু হু হু হু…., হায় রিংকা চিকা রিংকা চিকা রিংকা চিকা রে…। সত্যি, আমার এসব বলে এখন নাচতে ইচ্ছে করছে। যখন ‘স্টুডেন্ট অব দ্যা ইয়ার’ হিসেবে রিয়াদের নামটা ঘোষণা করা হলো তখন আমার বুকটা গর্বে ভরে গিয়েছিল। মনে হয়েছে, আমার রিয়াদ পাচ্ছে এওয়ার্ডটা। আমার রিয়াদ! তারপর যখন ও পুরষ্কারটা হাতে নিয়ে স্টেজে দাঁড়িয়েছিল তখন আমি নিজেকে ওর পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় কল্পনা করতে লাগলাম। আর তারপর যখন স্যার মাইকে ওর নাম ঘোষণা করলেন সবার সামনে কিছু বলার জন্য তখন আমি কতটা খুশি হয়েছিলাম সেটা আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না।
আমি ওকে দূর থেকে ভালোবাসি। এমনিতে ওর সাথে এখনো আমার তেমন ভালো সম্পর্ক হয়ে ওঠেনি। তবে আমি অপেক্ষায় আছি। যদি কোনদিন সুযোগ হয় তাহলে ওকে আমার মনের কথাগুলো বলে দিব। বলে দিব, আমি যে তাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আজ আর নয়। আর লিখতে পারবনা। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। সকাল সকাল উঠতে না পারলে আবার কোচিং মিস করব। আর কোচিং মিস করলে আমি আবার ওকে দেখতেও পারবনা। তুমি যেখানেই থাকো যেভাবেই থাকো, শুভ রাত্রি রিয়াদ।’
দুই পেজ মিলিয়ে এটা লিখা। আর লিখাটির নিচে বোল্ড করে লিখা, ‘Riyad my dream. He born in the earth only for me. আর কেউ যদি ওকে কেড়ে নিতে চায় তাহলে মেরে ফেলব তাকে হুমমমম…..।’
লিখাগুলো পড়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম। মটকি আমাকে এত ভালোবাসে! আরো একটি পৃষ্ঠা উল্টালাম এবার। এখানে কি সব কার্টুনের ছবি এঁকে রেখেছে। আরেকটি পৃষ্ঠা উল্টাতে যাব অমনি কার্টুনগুলোতে কিছু একটা লিখা বলে মনে হলো আমার। হুম তাইতো, চারটি কার্টুন। দুপাশে দুটি বড় আর মাঝখানে দুটি ছোট করে আঁকা। আমার দিক থেকে ডানদিকের কার্টুনটির ভেতরে লিখা, ‘আমি’, এর পরেরটিতে লিখা, ‘আমাদের খুকি’, এর পরেরটিতে লিখা, ‘আমাদের খোকা’, এবং শেষেরটিতে লিখা, ‘রিয়াদ আমার গুলুগুলু সোয়ামী।’
এগুলো পড়ে আমার এত হাসি পেল যে, একেবারে তানহার বিছানায় পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। মনের অজান্তেই নিজেকে আমার ছোট বলে মনে হতে লাগলো এবার। যে মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসে আর আমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখে অথচ তার সাথে আমি ক্লাসরুমে সেদিন এত খারাপ ব্যবহার করেছি! না জানি ও সেদিন কত কষ্ট পেয়েছে! হয়তবা কেঁদেছেও। আবার নিজেকে নিজে বললাম, ‘নাহ, আমি কি আগে এতসব জানতাম নাকি?’
তানহার বিছানায় শুয়ে আছি আমি। প্রায় বিশ মিনিটের মতো হয়ে গেছে আমি ওর রুমে ঢুকেছি। ভেতরে কেমন যেন একটা ফিলিংস চলে আসলো আমার। তানহার বালিশগুলো দেখতে লাগলাম। ভাবতে লাগলাম, ‘মটকিটা এখানেই ঘুমোয়। এখানেই গড়াগড়ি খায়। ও বিছানায় উঠলে হয়ত বিছানাটাও প্রাণ সংশয়ে আত্ম চিৎকার দিয়ে ওঠে।’ ওকে নিয়ে কখনো ইমোশন আবার কখনো ফান কাজ করতে লাগলো আমার মনে।
কপালে কারোর স্পর্শ অনুভূত হলো আমার। আস্তে করে চোঁখ মেললাম। তাকিয়ে দেখি তানহা! হুড়মুড় খেয়ে উঠে বসলাম আমি। বললাম,
-সরি, কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি। কখন এসেছ?
জানালার পর্দাটা সরাতে সরাতে ও বললো,
-এইতো কিছুক্ষণ হলো। আম্মু বললো কেউ একজন আমার খোঁজ করতে এসেছে। তারপর রুমে এসে দেখলাম সে ঘুমোচ্ছে। যান, ফ্রেশ হয়ে খেতে আসবেন।
এই বলে ও রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ডায়েরিটা আমার পিঠের নিচে পড়েছিল। ও টের পায়নি আমি যে পড়েছি ডায়েরিটা। এই সুযোগে জায়গা মতো সেটা রেখে দিলাম। আমি বসে আছি। কোন ওয়াশরুমে যাব বুঝতে পারছিলামনা। কিছুক্ষণ পর ও আবার রুমে আসলো। হাতে একটা টাওয়াল। সামনে এসে আমার দিকে টাওয়ালটি বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-এই নিন! হাতমুখ ধুয়ে এটা দিয়ে মুছে নিবেন। আম্মু বলেছে আপনার জন্য টেবিলে খাবার দিতে। ধরুন এটা আমার কাজ করতে হবে।
আমি বুঝতে পেরেছি সেদিনের দেয়া ধমকগুলো এখনো ভুলতে পারেনি ও। তাই অভিমান করে এভাবে কথা বলছে। যেহেতু ওদের বাসায় আছি তাই আমি আর সেসব নিয়ে কিছু বললামনা। টাওয়ালটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
-কমন ওয়াশরুমে যাব নাকি তোমারটাতে যাব?
ও বললো,
-আপনি আমাদের মেহমান। যান, আমারটাতে যান। কমন ওয়াশরুমটা কিছুটা অপরিষ্কার। আমারটাতেই যান!
এই বলে ও চলে যাচ্ছিল। দরজার সামনে গিয়ে আবার ফিরে এলো। আমিও ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে থেমে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
-কিছু বলবা?
ও বললো,
-আপনার মুখটা অনেকটা কালো হয়ে গেছে। ধুলোবালিতে হয়ত হয়েছে এমন। নিজের যত্ন নেননা নাকি! আমার ফেসওয়াশটা ব্যবহার করতে পারেন৷ আর হ্যাঁ, আমার আব্বু এখনো ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম ক্রিম ইউজ করেন। এনে রাখছি টেবিলের উপর। পরে চলে আসবেন ডাইনিং রুমে।
আমি ওর কথার স্টাইল দেখে অবাক হচ্ছিলাম। তবুও একগাল হেসে বললাম,
-আচ্ছা ঠিক আছে।
ওর ফেসওয়াশটা হাতে নিতেই নজর পড়লো যেখানে ® মার্কটি দেয়া সেটার পাশে সেও + দিয়ে তারপর ‘T’ অক্ষরটি কলম দিয়ে লিখে বৃত্ত দিয়ে দিয়েছে! অবাক তো হলামই আর মনে মনে বললাম, ‘ওর কি মেন্টালি কোন প্রবলেম আছে নাকি?’ উল্লেখ্য, বিভিন্ন পণ্যোর গায়ে যে ® মার্কটি দেয়া থাকে সেটি দেয়া হয় পণ্যটি R for Right তথা সঠিক এটা বুঝাতে।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ক্রিম মেখে চলে গেলাম ডাইনিং রুমে। বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে টেবিলটা। খাবারের ডেকোরেশনটাও ছিল দেখার মতো। ও দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বললো,
-বসুন! নিজে নিয়ে নিয়ে খেতে পারবেন নাকি আমাকে দিয়ে দিতে হবে?
এমন সময় কিচেন থেকে ওর আম্মু বলে উঠলো,
-তানু মা, তোমার ফ্রেন্ডকে সবকিছু পাতে দিয়ে দিও। লজ্জায় খেতে চাইবেনা হয়ত।
-আচ্ছা আম্মু, দিচ্ছি।
ও একটু চেঁচিয়ে উত্তর দিলো।
আমি এবার ওকে একটু খোঁচা দিলাম। বললাম,
-বেশ বিরক্ত হচ্ছো মনে হচ্ছে! আমি আসাতে তোমার প্রতি তোমার মায়ের ভালোবাসা কমে যাচ্ছে নাকি?
-এসব বলছেন কেন? আর আমি বিরক্তই বা হবো কেন? আমার মা তো আমারই থাকবেন। ভালোবাসাটও আমার জন্যেই।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম,
-আসলে, আমার তো মা নেই তাই জানিনা মায়ের ভালোবাসা কেমন। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন আর মাকে পাশে পাইনি। তোমার মা সত্যিই খুব ভালো। অনেক ভালো।
-সরি, আমি আপনাকে সেভাবে আঘাত করতে চাইনি। আমি জানতামনা যে আপনার আম্মু নেই। সরি, প্লিজ খেয়ে নিন!
এই বলে ও পাতে ভাত-তরকারি দিতে লাগলো আমার। ওকে অফার করলাম সাথে খাওয়ার জন্য কিন্ত খায়নি। বসে রইলো আমার সামনে। আর কিছুক্ষণ পরপর এটাসেটা পাতে দিয়েই যাচ্ছিল। ডাইনিং রুমটা তানহার রুমের সাথেই লাগোয়া। আমার ফোনটি ওর বিছানায় রেখে এসেছি। ডায়েরি পড়ার সময় একবার বের করেছিলাম টাইম দেখার জন্য। পরে আর পকেটে বা ব্যাগে রাখতে খেয়াল ছিলনা। ফোনের কথা মনে পড়তেই ফোনটা বেজে উঠলো আমার। এমনটা হয় প্রায়সই। এটা কাকতালীয়। ফোন বাজতে দেখে তানহা বললো,
-আপনি খান আমি ফোনটা নিয়ে আসছি।
ও চলে গেল। ও রুমে যেতেই রিংটোন বন্ধ হয়ে গেল। ভাবলাম, রিসিভ করে আবার কথা বলা শুরু করলো নাকি! নাহ, তেমন কিছু না। ও ফোনটি হাতে নিয়ে চলে আসলো আমার সামনে। আমি ওর মুখের দিকে তখনো তাকাইনি। ভাত খেতে খেতেই বললাম,
-একটু ডাল দাওতো!
আমার কথা শুনে ও দাঁড়িয়েই রইলো। নড়েনি। আবার বললাম,
-একটু ডাল দাও। বাটিটা দূরে আমি নাগাল পাচ্ছিনা।
বলতে বলতে ওর দিকে তাকালাম। ওর চেহারাটা লাল হয়ে গেছে। ভয় পেয়ে গেলাম আমি। জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে?
-আপনার মৃত মা কি কবর থেকে ফোন দিয়েছিল আপনাকে! কেন বললেন এতবড় একটা মিথ্যা?
আমি ওকে বললাম,
-সেই কখন থেকে বাড়িতে না গিয়ে তোমার জন্য বসে আছি৷ তুমি এসেছ দেরি করে। আবার এসে আমার সাথে আপনি আপনি করে কথা বলতেছ! আমি তোমার কত বছরের বড় হই হুমমম? মিথ্যাটা বলেছিলাম তোমার একটু সিম্পেথি পাবার আশায়। সেটাও আর পেলাম কই। আমি না হয় সেদিন তোমাকে রাগের মাথায় কয়েকটা ধমক দিয়েই ফেলেছিলাম, সেজন্য তুমি একেবারে কোচিং, স্কুল সব ছেড়ে দিবা? এটা কোন কথা হলো বলো?
নাহ, এতকিছু বলার পরও ওর চেহারায় কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলোনা। বাড়াবাড়িটা হয়ত একটু বেশিই করে ফেলেছি। খাবার শেষ করে আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম। বললাম,
-আসছি আন্টি। আর হ্যা, রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে।
আন্টি বললেন,
-তাই। আচ্ছা বাবা, যখনি সময় পাও এসো। তোমার এই মাকে এসে দেখে যেও। সাবধানে যেও বাবা।
-আচ্ছা আন্টি। আসসালামুআলাইকুম।
এই বলে তানহার রুমের সামনে গেলাম। দরজাটা চাপানো। নক করলাম আমি। দুবার নক করার পর ও বললো,
-আসুন!
ভেতরে ঢুকলাম আমি। ব্যাগটা নিতে নিতে বললাম,
-সেদিন যা হয়েছে না হয়েছে সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। আর আজকে মাকে নিয়ে মিথ্যা বলার জন্যেও ক্ষমা চাইছি। প্লিজ, নেক্সট উইক থেকে রেগুলার কোচিং-ক্লাসে যেও। আসছি আমি।
কথাগুলো একটু ভারি স্বরেই বললাম। বেরিয়ে এলাম আমি। বাসার বাইরে এসে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাটছি আর ভাবছি, ‘আমি যাই বলিনা কেন, তানহা সত্যিই আমাকে অনেক ভালোবাসে। ওর মনটা অনেক ভালো। কলেজ লাইফের দেড় বছরে ওকে কোনদিন কারোর সাথে কোন বাজে আচরণ করতে দেখিনি। পড়াশোনাতেও অনেক ভালো। আর ওর পরিবারটা! পরিবারটাও খুব ভালো। আমি কি তাহলে ওর সাথে অন্যায় করছি? ওর অজান্তেই আমাকে যে ও ভালোবাসে সেটা জেনে নিয়েছি আমি। এখন আমার কি করা উচিৎ? ওর সাথে কি ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলবো যেন ও নিজে থেকেই আমাকে ভালোবাসার কথাটি বলে! নাকি আমিই ওকে বলে দিব, ‘তানহা, তোমাকে ভালোবাসি আমি!’
……..চলবে……..

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD