বাসর ঘরে বসে ফুপিয়ে কেঁ’দে চলেছে আনিশা।অ’তি’রি’ক্ত কাঁ’দার ফলে হেঁ’চকি উঠে গিয়েছে।গালগুলো লা*ল টকটকে হয়ে গিয়েছে।চো’খগুলো ফু’লে গিয়েছে।
“কি দো*ষ করেছিলাম আমি!যাকে ভালোবাসি সেই আমাকে সব থেকে ঘৃ’না করে।ভা*গ্যটা এতোটাই খা’রাপ কেনো আমার”
দরজা খোলার শব্দে নড়েচড়ে বসলো আনিশা।আলভি এসেই আনিশাকে বিছানা থেকে নিচে নামালো।
“এই তোর কি ল*জ্জা নেই তোকে আমি ভালোবাসি না বুঝেছিস তাও কেনো আমাকে বিয়ে করলি নিজের বেস্টফ্রেন্ডের এতো বড় ক্ষ*তি করলি কিভাবে।”
আলভি আনিশার বা’হু শ’ক্ত করে চেপে ধরে আছে।ব্যাথায় ফুপিয়ে উঠছি।ছাড়ানোর চে!ষ্টা করতে লাগলো সে। আনিশা কাঁ’পা কাঁ’পা কন্ঠে বললাম,,,
“আ..মি কি কর..তাম বলু..ন ও.রা তো আ.মায় আপনার সাথে জো..ড় করে বি..য়ে দি..য়ে দিলো আ..মার কোনো শ..খ ছিলো না আ..প..নাকে বি..য়ে করার”
“তুমি জানতে না আমি তোমারই বেস্টফ্রেন্ড ফারিহাকে ভালোবাসি!তোমার তো ল*জ্জা থাকা উচিত যে নিজের বেস্টফ্রেন্ডের হবু বরকে বিয়ে করেছ”
আলভির কথায় ফারিহার কথা মা*থায় আসলো আনিশার।মেয়েটা তো প্রচন্ড ভালোবাসে আলভিকে।আলভি নিজের চুল টেনে ফ্লোরে বসে পরল।আনিশা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
কি করবো আমি এখন।একদিকে নিজের ভালোবাসা আরেকদিকে নিজের বেস্টেফ্রেন্ড।কি করবো এখন আমি!হ্যা আমার সামনে বসে থাকা লোকটাকে ভালোবাসি আমি প্রচন্ড ভালোবাসি।কিন্তু আমার ভা*গ্য এতোটাই খারাপ যে সে ভালোবাসে আমারই বেস্টফ্রেন্ডকে!
ফারিহার কলে আনিশার ঘো’র কাটলো।কাঁ’পা কাঁ’পা হাতে কল রিসিভ করতেই অপাশ থেকে ফুঁ’পিয়ে কাঁদার আওয়াজ পেলো।মেয়েটা হে’চকি উঠে গিছে!মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,
“আ..নি কী হ.য়ে গে.লো বল না তুই তো জা..নিস আমি আ..লভিকে ক..তো ভা..লোবাসি”
আনিশাও কেঁদে চলেছে এপাশ থেকে।ও কাঁদার জন্য কথাও বলতে পারছে না।আনিশা কাঁ’পা কাঁ’পা ক’ন্ঠে বললাম,,,
“ফা.রু তুই বি..শ্বাস ক.র আ…মি কি.ছুই জা..নতাম না ওরা আ..মাকে জো..ড় করে বি..য়ে দিয়ে দিয়েছে আ..লভির সাথে”
মেয়েটা কান্না থামানোর বৃথা চে*ষ্টা করে বলল,,
“আমি তোকে নিজের থেকেও বিশ্বাস করি আনি”
আলভি আনিশার হাত থেকে ফোন কে’ড়ে নিয়ে বলল,,,
”ফারুপাখি তুমি আমায় বি’শ্বা’স করো তো!এই মেয়েটা আমাকে ইচ্ছে করে বিয়ে করছে।আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
ফারিহা শ’ক্ত ক’ন্ঠে বলল,,,
“দেখুন আমি এখন আপনার কিছুই না আর আনিশা এখন আপনার ওয়াইফ সো ওর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চে’ষ্টা করবেন আমার আনিকে ক*ষ্ট দিলে আমি কতোটা ভ’য়ং’ক’র হতে পারি তা আপনি খুব ভালোকরেই জানেন”
“ফারুপাখি তুমি বোঝার চে’ষ্টা করো না আমি ওই মেয়েকে ভালোবাসি না শুধু তোমাকে বাসি আর এই মেয়েটা একটা বে!ই’মা’ন তোমার সাথে বেইমানি করেছে ও ইচ্ছা করলে নাও বলতে পারতো”
“তাহলে তো আপনিও বে’ই’মা!ন মি.আলভি শাহরিয়ার।আপনিও ইচ্ছা করলে বিয়েটা আটকাতে পারতেন”
“ওরা আমায় জো*ড় করছিলো তুমি বুঝতেছোনা কেনো!”
ফারিহা ঝাঁ’ঝা’লো ক’ন্ঠে বলল,,,,
”নিজের দিকটা বুঝতে পারছেন আর আনির দিকটা বুঝতেছেন না।ওকেও জো*ড় করা হয়েছিলো।আর আজকে থেকে ভু*লে যান ফারিহা নামের কাউকে ভালোবাসতেন আপনি।আর আনিকে ক*ষ্ট দেওয়ার কথা মা*থায়ও আনবেন না”
এবার আলভিও চি*ল্লি*য়ে বলল,,,,
“সেই তখন থেকে আনি আনি করছো নিজের আর আমার কথাটা তো ভেবে দেখবে নাকি।এই মেয়েটার মা’ঝে কি পেয়েছো যে সারাদিন আনি আনি করো।আর আমার ভালোবাসার কি কোনো মূ’ল্য নেই নাকি!যখন যাকে বলবে তাকে দিয়ে দেবো এনাফ অনেক হয়েছে। আনিকে অনেক ভালোবাসো না এবার সেই আনিকেই কি করি আমি তাই দেখো!”
কথাগুলো বলেই আলভি ফোন কেটে দিয়ে আনিশার দিকে তাকালো।আনিশা নির্বা’ক চোখে তাকিয়ে আছে।এমন ভাবে বসে আছে যেনো একটা পুতুল।আলভির চো’খ দিয়ে আ’গু’ন ঝ’ড়ছে।হয়তো ভালোবাসার মানুষের থেকে এমন কোনো কথা আশা করেনি।আলভি এসে আনিশাকে টেনে দাঁড় করালো।তারপর নিয়ে বেলকনিতে ছুঁ*ড়ে মারলো।দেওয়ালের সাথে লেগে হাত কে*টে গেলো কিন্তু এখন আনিশার নিজেকে অনুভূতি শূ’ন্য লাগছে তাই ব্যা’থা টে’র পাচ্ছে না।
আলভি ওকে রেখেই গেট দিয়ে দিলো বেলকনির।ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে তবুও আলভিকে খুলতে বলছে না।গুটিসুটি মেরে এক কোনায় বসে থাকলো ও।
২.
ফারিহা হ্যালো হ্যালো বলতে ছিলো। কিন্তু দেখে আলভি ফোন কেটে দিয়েছে।আবারও ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। ফারিহার আনিশার জন্য অনেক চি’ন্তা হতে লাগলো।ফারিহা হাসলো। চোখে পানি কিন্তু তাও হাসছে মেয়েটা।হাসতে হাসতে বলল,,,
“ভালো থাকুক আমার ভালোবাসা আর আমার আনি।”
ফারিহা হুট করে কাঁদতে লাগলো।কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,
“কেনো আল্লাহ তুমি আমাদের তিনটা জীবন ন*ষ্ট করলে।আমি তো খুব ভালোবাসি আলভিকে তাহলে কেনো ওকে আমায় দিলে না!আমার যে খুব ক*ষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে বুকের বা পাশে কেউ ছু*ড়ি দিয়ে আ’ঘা’ত করছে।আমি স*য্য করতে পারছি না আল্লাহ!আমার আনিটারও ক’পা’ল খা’রাপ মেয়েটা যার কাছে গিয়ে পরলো সে তো ওকে ভালোবাসে না বরং জীবন্ত লা’শ বানিয়ে দিবে।বাঁচতে দিবে না আলভি আনিকে।ও যে খুব ভালোবাসে আমায়।ও ভাবছে আনির জন্যই সব হয়েছে কিন্তু মেয়েটা যে কিছুই জানে না।মা-বাবা না থাকা মেয়েটার সু’খ নেই কি কপালে।আল্লাহ আমার আনিকে ভালো রেখো।আমি ওদের কাউকে ছা’ড়বো না যারা এইসব কিছুর জন্য দায়ী!”
ফারিহা কাঁদতে লাগলো।ভালোবাসার মানুষটার পাশে কিভাবে সে অন্যকাউকে স*য্য করবে!ফারিয়া চোখ মু’ছে ওর ফ্রেন্ড ইয়ামিনকে ফোন করলো।ইয়ামিন বেচারা ঘুমাচ্ছিল।আজকেই চট্টগ্রাম থেকে এসেছে।ফোনের শব্দে লাফ দিয়ে উঠল।ফারিহার নাম্বার দেখে বি*র*ক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে বলল,,,,
“ওই ফ’কি’ন্নির ফ’কি’ন্নি তুই জানস না আমি আজকে মাত্র বাড়ি আইছি আর তুই রাত দুইটার সময় ফোন দিছিস ক্যান”
ফারিহা কিছুটা জো*ড়ে বলল,,,
“সাট আপ ইয়ামিন”
ইয়ামিন এবার সি’রি’য়া’স হলো।ফারিহার গলা শুনেই বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে।ও সি’রি’য়াস!লি বলল,,,
“কি হয়েছে ফারিহা”
ফারিহার এখন একজন মানুষের খুব প্রয়োজন ছিলো।ও কেঁ’দে দিলো।ইয়ামিন অ’স্থি’র হয়ে বলল,,,
“কি হয়েছে ফারিহা বল আমায়”
ফারিহা ফু’পিয়ে ফু’পিয়ে বলল,,,
“তুই একটু আসবি ইয়ামিন”
“তুই কাঁদিস না ফারু আমি আসছি দাঁড়া”
ফোন না কেটেই শার্ট পরে বাইক নিয়ে রওনা হলো ফারিহাদের বাসার উদ্দেশ্য।বাসার সামনে এসে বাইক থামিয়ে দৌড়ে দরজার সামনে এসে কলিংবেল দিতে লাগলো।ফারিহাদের বাসার কাজের মেয়ে রিহা এসে দরজা খুলল।রিহা ইয়ামিনকে দেখে বলল,,,
“কিছু হইছে ভাইজান যে আপনি এতো রাতে এখানে”
“নারে রিহা কিছু হয়নি ফারু কই”
“আচ্ছা তুই যা আমি ফারুর কাছে যাচ্ছি”
কথাটা বলে ইয়ামিন দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।ফারিহার রুমের সামনে এসে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,,,,
“ফারু দরজা খোল”
ফারিহা দরজা খুলেই ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরলো।ইয়ামিন ওকে শা’ন্ত হতে বলল।ফারিহা কেঁ’দেই যাচ্ছে।ফারিহাকে বিছানায় বসিয়ে বলে,,,
“কি হয়েছে ফারু বল আমাকে না হলে বুঝবো কিভাবে আলভি ভাইয়ার সাথে কি ঝ*গ*ড়া হয়েছে”
ফারিহা কান্না থামিয়ে বলে,,,
“নারে আমি সারাজীবনের জন্য আলভিকে হা’রি’য়ে ফেলেছি”
ইয়ামিন প্র’চ’ন্ড অবাক হলো।যাদের ঝ*গ*ড়াই হতো না তারা আ’লা’দা!ইয়ামিন বললো,,,,
”কি হয়েছে ফারু বলবি তো”
“আনি আর আলভির বিয়ে হয়েছে”
ইয়ামিন প্র’চ’ন্ড আকারে অবাক হলো।ও চি*ল্লি*য়েই বলে ফেলল,,,
“কি আনির সাথে কিভাবে বিয়ে হলো”
“আমি জানি না কিছু জানি না”
কথাটা বলেই ফারিহা ইয়ামিনকে রুমের বাইরে এনে দরজা লাগিয়ে দিলো।ইয়ামিন ভাবতে লাগলো কিভাবে স’ম্ভ’ব আলভি ভাইয়া আর আনিশা।আসলে আনিশা ফারিহা ইয়ামিন তিনজন বেস্টফ্রেন্ড।ইয়ামিন আবার ফারিহার ফুফাতো ভাই।ইয়ামিনের কোনো বোন নেই তাই ও আনিশা আর ফারিহাকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসে।সেই দু’জনেরই আজকে এই অবস্হা।ও কিছুই বুঝতে পারছে না।ঘুম ও আসছে প্রচুর তাই ফারিহাদের বাসায় ওর ব’রা’দ্দ রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো।
৩.
সূর্যের আলো চোখে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুললো আনিশা।চোখ খুলে নিজেকে বেলকনিতে আবিষ্কার করলো।নিজের এই অবস্থা দেখে তা’চ্ছি’ল্য হাসলো।তার এগুলো সবেতেই অ’ভ্যা’স আছে!বেলকনির দরজায় টোকা দিলো।কেউ খুললো না!হয়তো আলভি এখনো ঘুমাচ্ছেন।